সিলেটে আলো :: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও কর্তৃপক্ষের আদেশ পালনে কালক্ষেপন করছেন শিক্ষিকা সুরজাহান আক্তার। তিনি উপজেলার বগুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ইতিমধ্যে তার অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ এলাকার সর্ব মহলে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লিটন খান যথাযথ ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমেও বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে রবিবার বিকালে শিক্ষিকা সুরজাহান আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরেজমিন তদন্তে যান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানাসহ একটি তদন্ত টীম। তদন্তকালে উপস্থিত ছিলেন- বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ স্থানীয় সচেতন মহল। তদন্ত শেষে অভিযোগটি সত্য বলে প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষিকা সুরজাহান আক্তার দোষী সাব্যস্থ হন। তখন উত্তপ্ত পরিস্থিতি প্রশমনে বিদ্যালয় অঙ্গনে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ বজায় রাখতে মানবিক বিচেনায় শিক্ষিকা সুরজাহান আক্তারকে স্বেচ্ছায় নিজ ইচ্ছেমাফিক অন্যত্র বদলির জন্য লিখিত আবেদন করতে ১০ মিনিট সময় বেঁধে দেন তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা। অন্যথায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির লিখিত নিয়ে তাকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলি করা হবে বলেও তিনি জানান। কিন্তু এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ওই শিক্ষিকা কালক্ষেপন করে বিভাগীয় আদেশ লঙ্ঘন করে বর্তমান কর্মস্থলেই টিকে থাকতে নানা ফন্দি আঁটছেন বলে স্থানীয়রা কানাঘোষা করছেন। তবে বিষয়টির ফলাফল শেষ পর্যন্ত কী হবে সে অপেক্ষায় তাকিয়ে আছেন সমাজের সচেতন মহল। উল্লেখ্য, বগুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুরজাহান ও একই বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরী বুলবলের অবৈধ সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের। বিষয়টি জানাজানি হলে তারা নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিতে থাকেন। এতে আরও কৌতুহল জাগে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ এলাকাজুড়ে। এ সময় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লিটন খানের এক প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষিকা বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে সেখানকার স্থানীয় এক মৌলভী (হুজুর) তাদের বিয়ে পড়ান। তবে বিয়ের নিবন্ধিত কাবিননামা দেখাতে পারেননি তিনি। অথচ উভয়েরই রয়েছে পৃথক সংসার। শিক্ষিকার সংসারে রয়েছে স্বামী ও এক সন্তান। অপরদিকে বুলবুলের সংসাওে রয়েছে স্ত্রী ও ৩ সন্তান। তাই বহুল আলোচিত বিষয়টি বর্তমানে ‘টক অব দোয়ারাবাজার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লিটন খান বলেন, “রোববার স্থানীয় সচেতন মহলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের উপস্থিতিতে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা সুরজাহানের বদলির আদেশ দ্রুত কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তার বদলি কার্যকরের ব্যাপারে আমরা সকলেই একমত। তবে সমাজে স্বামী-স্ত্রীর মর্যাদা ধরে রাখতে দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরী বুলবুল স্বেচ্ছায় চাকুরি থেকে পদত্যাগ করার বিষয়ে আমরা সন্তুষ্ট আছি। কিন্তু অবৈধ পন্থায় কোনো অপশক্তিই আলোচিত ওই শিক্ষিকার বদলি ঠেকাতে পারবে না। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে নামতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালোই বলে যাবো।” জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন, “তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রথমত মানবিক বিবেচনায় স্বেচ্ছায় অন্যত্র বদলির আবেদন করতে ওই শিক্ষিকা (সুরজাহান) কে আমি মৌখিকভাবে আদেশ দিয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও একদিনের সময় নিয়েছেন তিনি। তবে নির্ধারিত সময় পার হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রতিবেদন পাঠিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেননা শিক্ষার প্রতিকুল পরিবেশ রুখতে আমরা সর্বদাই আপোষহীন।